জরুরি বিভাগে ফোনে ব্যস্ত চিকিৎসক, হৃদরোগে নারীর মৃত্যু
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সামনে ৬০ বছর বয়সী এক নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক তার মোবাইল ফোনে ইনস্টাগ্রাম রিল দেখছিলেন।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশে। এই ঘটনাটি রোগীর স্বজনদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া রোগীর মৃত্যুর ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও ভাইরাল হয়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের ময়নপুরীর একটি হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার তার মোবাইল ফোনে ইনস্টাগ্রাম রিল দেখার সময় ৬০ বছর বয়সী এক নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জেলার মহারাজা তেজ সিং জেলা হাসপাতালে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা রোগীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। পুরো ঘটনাটি সিসিটিভিতে রেকর্ড হয়েছে।
রোগী পরিবারের অভিযোগ, শুধুমাত্র চিকিৎসকের গাফিলতিতে প্রাণ হারিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। একইসঙ্গে রোগীর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে ওই চিকিৎসকের বিরদ্ধে।
ইন্ডিয়া টুডে বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ওই নারীর নাম প্রবেশ কুমারী। ঘটনার দিন তিনি বুকে তীব্র ব্যথার কথা জানানোর পর তার ছেলে গুরুশরণ সিং তাকে দ্রুত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেসময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. আদর্শ সেঙ্গার।
গুরুশরণ অভিযোগ করেছেন, বারবার সাহায্যের জন্য অনুরোধ করা সত্ত্বেও ডাক্তার বসেই ছিলেন এবং ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে রিল দেখেছেন। নিজে রোগী দেখার পরিবর্তে তিনি নার্সিং কর্মীদের রোগীর সাথে দেখা করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “আমার মায়ের অবস্থা খারাপ হলে, হতাশার সেখানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। বিরক্ত হয়ে ডা. সেঙ্গার অবশেষে চেয়ার থেকে উঠে গেলেও সাহায্য করার পরিবর্তে তিনি আমাকে চড় মারেন। ততক্ষণে, আমার মা ইতোমধ্যেই মারা গেছেন।”
সংবাদমাধ্যম বলছে, মঙ্গলবার দুপুরে প্রবেশ কুমারী নামের ওই রোগীকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্ট্রেচারে শুইয়ে রোগীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর ১৫ মিনিট কেটে গেলও তিনি চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও চিকিৎসক সামনেই ছিলেন এবং বসে ছিলেন।
মৃত বৃদ্ধার পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসক বসে বসে নার্সদের কয়েকটি নির্দেশ দেন। কিন্তু নিজে উঠে গিয়ে কোনও রোগীকেই দেখার প্রয়োজন মনে করেননি।
এদিকে উত্তেজনা বেড়ে গেলে হাসপাতালে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে চিফ মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট (সিএমএস) মদন লালও ঘটনাস্থলে আসেন। মামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ডাক্তারের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে এরই মধ্যে সামনে এসেছে সিসিটিভি ফুটেজ। সেখানেও দেখা গেছে, চেয়ারে মোবাইল হাতে বসে রয়েছেন চিকিৎসক। আবার চড় মারার যে অভিযোগ উঠেছে, তারও প্রমাণ মিলেছে।