১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে তোতাপাখি!

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
তোতাপাখি, নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে উজ্জ্বল রঙের পালকে ঢাকা চঞ্চল এক পাখির ছবি। অনেকটা মানুষের মতো কথা বলে পাখিটি। কেউ লাল, কেউ হলুদ, কেউ সবুজ, আবার কেউ নীল। সত্যিই কি তোতাপাখি মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারে? কিভাবে মানুষের মতো শব্দ করে? আসলে তোতাপাখিরা আমাদের ভাষা শেখে না, এরা শুধু আওয়াজ অনুকরণ করে।
তোতাপাখির মস্তিষ্কে প্যালিয়াম নামে এক ধরনের নিউরাল কাঠামো আছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের নিওকোর্টেক্সের মতো। এটি ভাষা শেখা, সমাধান খোঁজা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের মস্তিষ্কের বিশেষ গঠনের কারণে শব্দের কম্পন অনুকরণ করতে পারে। তাই যখন আমরা কিছু বলি, এরা সেটা শুনে একই রকম আওয়াজ করার চেষ্টা করে, যা শুনতে মানুষের কথার মতো লাগে।
মজার ব্যাপার হলো, কিছু তোতাপাখি শুধু নকল করেই থেমে থাকে না, এরা কিছু শব্দের অর্থও বুঝতে পারে। অ্যালেক্স নামের বিখ্যাত আফ্রিকান তোতাপাখি ১৫০টিরও বেশি শব্দ রপ্ত করে ফেলেছিল!
শুধু দেখতে সুন্দরই নয়, এরা অসাধারণ বুদ্ধিমান ও আবেগপ্রবণও বটে। একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য জটিল ধরনের স্বরধ্বনি ব্যবহার করে, যা মানুষের কাছ থেকেই আয়ত্ত করা। বিশ্বে তোতাপাখির ৪০০টির মতো প্রজাতি আছে।
শস্যদানা, শিমুল, মহুয়া ফুলের পাপড়ি এদের পছন্দের খাবার। ডিম দেয় চার থেকে ছয়টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ই সম্মিলিতভাবে তা দেয় ও বাচ্চা লালন-পালন করে থাকে। তোতাপাখির জীবনকাল অবিশ্বাস্যভাবে দীর্ঘ। দীর্ঘায়ুর অন্যতম প্রধান কারণ এদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা।
সাধারণত যেসব প্রজাতির মস্তিষ্কের আকার শরীরের অনুপাতে বড় হয়, তারা বেশিদিন বেঁচে থাকে। ম্যাকাও প্রজাতির তোতাপাখির গড় আয়ু ৫০-৭০ বছর পর্যন্ত হয়, আবার কিছু তোতাপাখি ১০০ বছর পর্যন্তও বাঁচতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, তোতাপাখি মানুষের মতোই আনন্দ, দুঃখ ও একাকিত্ব অনুভব করে। এরা নিজেদের মালিকের সঙ্গে গভীর বন্ধন গড়ে তোলে এবং দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকলে বিষণ্ন হয়ে পড়ে। নীল-হলুদ ম্যাকাও তোতাপাখি যখন প্রিয় পরিচর্যাকারীর কাছ থেকে আদর পায়, তখন এদের সাদা গালের চামড়া লালচে-গোলাপি হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, আনন্দের সময় এদের মাথার মুকুট ও ঘাড়ের পালকও ফুলে ওঠে। অনেক তোতাপাখি শুয়ে ঘুমায় বা বিশ্রাম নেয়, যা সাধারণত অন্য পাখিদের মধ্যে দেখা যায় না। এটি এদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তার প্রতীক।