২০০ বছরের প্রাণ ৪০০ মণ আম

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ঢাকা থেকে পাঁচ বন্ধু বেড়াতে এসেছি ঠাকুরগাঁও জেলায়। শুধু ঐতিহাসিকতার স্পর্শই নয়, এই জেলায় আছে প্রাচীন একটি গাছ। গাছটির বয়স নাকি ২০০ বছরেরও বেশি। তা-ও আবার বট কিংবা অশ্বত্থগাছ নয়, একেবারে জীবন্ত সূর্যপুরী আমগাছ।
লোকমুখে শুনে আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকল। তাই অদ্ভুত সেই আমগাছটি দেখতে বেরিয়েছি।
ঠাকুরগাঁও থেকে বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারের মতো। ক্লান্তি ভর করার আগেই পৌঁছে যাই সেখানে।
উপজেলা সদর থেকে একটু ভেতরে হরিণমারী ইউনিয়ন। রাস্তার হলুদ মাইলফলকে চোখ রেখে আমরা এগোতে থাকি।
একটি ছোট সেতু পেরোতেই হরিণমারীর পিচঢালা পথ। দুই দিকে সারি সারি কাঁঠালগাছ।
পাখপাখালি খেলা করছে গাছের ডালগুলোতে। দূরে বেশ কয়েকটি ঘন সবুজ বাঁশঝাড়। গমক্ষেতের মধ্যে সর্দারি ঢঙে দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো। বাতাসে বাঁশপাতা নড়ার চটচট শব্দে অন্য রকম অনুভূতি হয় আমাদের। প্রাণ-জুড়ানো নানা দৃশ্য পেরিয়ে পৌঁছে যাই হরিণমারীর নয়াবাড়ী গ্রামে।
আমগাছের খোঁজ করতেই ষাটোর্ধ্ব এক দোকানি দূর থেকে দেখিয়ে দেন ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো আমগাছটি। দূর থেকে মনে হচ্ছে উঁচু আমগাছের বাগান। কিন্তু কাছে যেতেই চোখ ছানাবড়া। বাগান কোথায়, পাহাড় সমান আকার নিয়ে একটি আমগাছই যেন আকাশ ছুঁতে চাচ্ছে।
গাড়ি থেকে নেমেই দে ছুট। সবাই চলে আসি আমগাছটির নিচে। অবাক হয়ে দেখতে থাকি প্রায় দুই বিঘা জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ২০০ বছরের পুরনো আমগাছটি। অক্টোপাসের মতো মাটিতে নেমে এসেছে এর ১৯টি মোটা ডাল। স্থানীয়রা বলছে, গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ ফুট আর ঘের ৩০ ফুটের মতো।
মজার বিষয় হলো, গাছটির ডালগুলো মাটিতে নুয়ে পড়লেও সেখান থেকে নতুন কোনো গাছ জন্মায়নি। নুয়ে পড়া ডালগুলো দেখলেই মনে হয়, গাছটি অতি প্রাচীন। ডালগুলো মৃত মনে হলেও গাছটির শীর্ষভাগ এখনো চিরসবুজ। এরই মধ্যে মুকুল এসেছে গাছজুড়ে। কালের সাক্ষী আমগাছটির বড় মলিন ডালগুলো আমরা স্পর্শ করে দেখতে থাকি।
আমগাছটির ছায়ায় বসলেই দেখা যায় এর অবয়ব। সবার মনে একই প্রশ্ন, কত জীবনীশক্তি নিয়ে গাছটি বেঁচে আছে! গাছটি নিয়ে প্রচলিত আছে একটি কল্পকাহিনিও। এলাকাবাসী শামীম জানালেন সে কথা। আমগাছটির নিচে নাকি মোহরের কলস রেখে গাছটি লাগানো হয়েছিল। এ কারণেই আমগাছটি অন্য রকম শক্তি নিয়ে বেঁচে আছে।
বিস্ময় নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি গাছটি। তখনই সেখানে উপস্থিত হন এর বর্তমান মালিক নূর ইসলাম। পূর্বপুরুষদের কোন আমলে আমগাছটি লাগানো হয়েছে তা তাঁর জানা নেই। প্রাচীন এই গাছটি সম্পর্কে তিনি জেনেছেন তাঁর দাদার কাছ থেকে। তাঁর দাদা আবার সেটি জেনেছেন তাঁর দাদার কাছ থেকে। এভাবেই ধারণা করা হয়, আমগাছটির বয়স ২০০ বছরেরও বেশি। যুগ যুগ ধরে এই সূর্যপুরী আমগাছটিই নূর ইসলামদের দিয়ে আসছে রসালো ও সুস্বাদু আম। এখনো এই গাছ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ মণ আম পাওয়া যায়।
৪০০ মণ আম! আমরা অবাক হই। আমগাছের ছায়ার স্নিগ্ধতায় মন ভরে যায় সবার। আমাদের খেয়াল এড়িয়ে এরই মধ্যে অনেক দর্শনার্থী ভিড় জমিয়েছে গাছটির নিচে। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে আমগাছটি।
ফেরার সময় দূর থেকে চোখ রাখি গাছটির দিকে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মনে মনে বলি, বেঁচে থাকো যুগে যুগে।