বিনা অপরাধে ৪৩ বছর কারাভোগ করেন তিনি!
বিনা অপরাধে জীবনের অর্ধেকটা সময়ই কেটে গেছে কারাগারে। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। এভাবে লড়াই করতে করতেই কেটে গিয়েছে প্রায় পাঁচটি দশক। অবশেষে ৪৩ বছর পর বেখসুর খালাস হলেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা লখন পাসি। এখন তার বয়স ১০৪।
১৯৮২ সালে একটি হত্যা মামলার অভিযোগে লখন পাসিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেই আদালতই তাকে নির্দোষ বলে মুক্তি দিল।
এই ঘটনার সূত্রপাত ১৯৭৭ সালে। উত্তরপ্রদেশের কৌশাম্বি থানা এলাকার গৌরায়ে গ্রামে। ওই বছরের ৬ আগস্ট লখনের বাড়িতে মদ্যপ অবস্থায় হামলা চালায় ১০-১২ জন। লাঠি নিয়ে চলে মারামারি। প্রাণে বাঁচাতে পাল্টা হামলা চালান লখন। অভিযোগ, এই ঘটনায় প্রভু সরোজ নামে হামলাকারীদের একজন গুরুতর আহত হন। পরে মৃত্যু হয় তার।
এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় লখনকে। যদিও পরে জামিন পান তিনি। তবে একেবারে মুক্তি পাননি। ৫ বছর পর ১৯৮২ সালে এই মামলাতেই সেশন কোর্ট লখনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। পাল্টা নিজেকে নির্দোষ দাবি করে একের পর এক আদালতের দ্বারস্থ হতে থাকেন লখন। দীর্ঘ বছর ধরে চলতে থাকে এই আইনি লড়াই। শেষে এলাহাবাদ হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হন লখন। অবশেষে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে বেকসুর খালাস হলেন শতবর্ষী লখন।
এ প্রসঙ্গে লখনের আইনজীবী বলেন, ‘এই মামলায় কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। আদালত মামলাটি গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করেছেন। ৪৮ বছর পর লখনকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ’
জীবনের দীর্ঘ একটা সময় কারাগারে থাকার পরও মুক্তির পেয়ে উচ্ছ্বসিত লখন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো আশা ছাড়িনি। ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছি। সেই লড়াই অবশেষে সার্থক হয়েছে। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন।’
এদিকে জেল থেকে মুক্তি পেলেও স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন লখন। তার মেয়ে আশা জানিয়েছেন, মায়ের নাম ছাড়া অন্য কিছুই মনে নেই তার বাবার। ২০ বছর আগেই মৃত্যু হয়েছে তার মা পাপড়ি দেবীর। গত ৪৮ বছর আইনি লড়াই করতে গিয়ে নিজেদের জমিও বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। একই কথা জানিয়েছেন লখনের ছেলে সুরজও।