সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ৮ অভ্যাস
১. নতুন কিছু শেখা
আমরা যখন নতুন কিছু শিখি, সেটা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ব্যায়াম। একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, নতুন কিছু শেখার প্রক্রিয়া আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন কোষগুলোকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। নিউরোপ্লাস্টিসিটি বা নিউরাল প্লাস্টিসিটি বাড়ায়। মজার ব্যাপার হলো, যেকোনো সৃজনশীল কাজও মস্তিষ্ককে একইভাবে ভালো রাখে। নতুন একটা ভাষা থেকে শুরু করে, সেলাই, কোডিং, ড্রাইভিং—যেকোনো কিছুই হতে পারে আপনার মস্তিষ্কের জন্য ব্যায়াম, মস্তিষ্ক ভালো রাখার কার্যকর উপায়।
২. মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক
মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে নকশা করা যে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক যত মজবুত হবে, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ততটাই ভালো থাকবে। তাই সামাজিক জীবনযাপনের বিকল্প নেই। মা–বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নিন। খুদে বার্তা পাঠান। ছুটির দিনে ফোন করুন। নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হোন, মিশুন, জানুন, গল্প করুন, নিজের সামাজিক বলয়ের যত্ন নিন। এসব আপনাকে দীর্ঘজীবী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৩. হাঁটুন
ভাত বা কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ১০–১৫ মিনিট হাঁটুন। এতে গ্লুকোজ স্পাইক ও ইনসুলিন সেনসিটিভিটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ছাড়া সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট হাঁটুন। প্রথম ১০ মিনিট ধীরে হাঁটুন। তারপর ধীরে ধীরে গতি বাড়ান। মাঝেমধ্যে স্ট্রেচিং ও ডিপ ব্রিদিং করুন।
৪. ছোট ছোট কিছু অভ্যাস
আপনি যদি ডানহাতি হয়ে থাকেন, মাঝেমধ্যে বাঁ হাতে ব্রাশ করুন। বল শূন্যে উড়িয়ে বাঁ হাতে ধরুন। বাঁ হাতে অন্যান্য কাজ করার চেষ্টা করুন। উল্টো মুখে হাঁটুন। প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান। ধূমপান বা মদ্যপানের বদভ্যাস ছাড়ুন। নিয়মিত আট ঘণ্টা ঘুমান। যা কিছু আপনাকে সুখী করে, সেসব করুন। ইংরেজিতে একটা কথা আছে—‘হ্যাপিনেস ইজ দ্য কি’।
৫. কম খাওয়া ভালো
গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি স্বাভাবিকভাবে যতটা ক্যালরি গ্রহণ করেন, সেখান থেকে মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ কম গ্রহণ করার ফলে গড় আয়ু উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। বিপরীতভাবে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের সঙ্গে গড় আয়ু কমে যাওয়ার সরাসরি ও গভীর সম্পর্ক আছে। কেননা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে লিভার, কিডনি, হার্টের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই টাটকা ও মৌসুমি খাবার খান। ঘরে তৈরি খাবার খান।
৬. প্রতিদিন গ্রিন–টি, চা, কফি
প্রতিদিন গ্রিন–টি, চা বা কফি খেলে ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। কফি টাইপ–টু ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কয়েক ধরনের ক্যানসার ও আলঝেইমার্স ডিজিজ বা পারকিনসন্সের মতো কয়েক ধরনের মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমায়। যাঁরা নিয়মিত চা বা কফি খান তাঁদের কম বয়সে মৃত্যুর হার যাঁরা চা-কফি খান না তাঁদের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চা বা কফি মিলিয়ে আপনি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ কাপ বা ৪০০ মিলিগ্রাম খেলে সুফল পাবেন।
৭. ইতিবাচক জীবনযাপন
গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীরা নিয়মিত মানসিক চাপে ভুগছেন, তাঁদের হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ। ইতিবাচক মানুষের তুলনায় নেতিবাচক মানুষের অল্প বয়সে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৪২ শতাংশ বেশি।
৮. বেশি বেশি বাদাম
বাদাম হলো পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’। বেশ কয়েক ধরনের ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস বাদাম। কপার, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, নিয়াসিন, ভিটামিন বি–৬ ও ই–এর ভালো উৎস বাদাম। বিভিন্ন ধরনের হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা, ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিনড্রোম ও কয়েক ধরনের ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন বাদাম খেতেই হবে।
সূত্র: হেলথলাইন