বিশ্বনাথে পলো বাওয়া উৎসব মেতেছেন গ্রামবাসী
সমুজ আহমদ সায়মন, বিশ্বনাথ
মাঘের হিমেল হাওয়ায় দেশ যখন কাঁপছে তখনই হাড় কাপানো শীতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর পুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দারা।
বুধবার সকালে শীত উপেক্ষা করে পুরো গ্রামবাসী জড়ো হন গ্রামের দক্ষিণের বিলের ধারে। হাতে বিভিন্ন ধরনের জাল আর মাছ ধরার সরঞ্জাম। বিলের ধারে বসে চলে মাছ ধরার প্রস্তুতি। পুর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্য যুগযুগ ধরে আজও বুকে ধারণ করে এ গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দারা। তাই ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতি বছর মাঘ মাসের পহেলা তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয় বার্ষিক এ পলো বাওয়া উৎসব।
বেলা ১১টা থেকে গ্রামের সব বয়সের পুরুষ ও অন্য গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়স্বজন এক সঙ্গে মাছ শিকারে নামেন এ বিলে। মাছ ধরা দেখতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন শিশুসহ গ্রামের বধুরা ও বিভিন্ন বয়সের লোকজন। স্বল্প পানি ও কচুরিপানা না থাকায় মাছ নিয়ে ঘরে ফিরছেন অনেকই। শিকার করা মাছের মধ্যে ছিল বোয়াল, শোল, মিরকা, কারপু, বাউস, ঘনিয়া ও রুইসহ বিভিন্ন জাতের মাছ।দিনভর গ্রামবাসীর সাথে মাছ ধরায় অংশ নেন অনেক প্রবাসীরাও।পলো দিয়ে মাছ ধরতে পেরে আনন্দের শেষ নেই তাদের।
এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা যায়,প্রায় দই শতাধিক বছর ধরে পলো বাওয়া উৎসব চলছে। মাঘ মাসের পহেলা দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে এক যোগে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা হয়।
গোয়াহরি গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাম আহমদ বলেন, আমাদের পুর্ব পুরুষের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর পহেলা মাঘ আমরা এ উৎসবের আয়োজন করে থাকি।আমাদের উপজেলায় এটি সবচেয়ে বড় পলো বাওয়া উৎসব। আমরা গ্রামবাসী মিলে মিশে প্রতি বছর এ বিলে থেকে উৎসব করে দেশীয় প্রজাতির সু-স্বাদু মাছ শিকার করে থাকি।
সৌখিন মাছ শিকারী আসাদ বলেন,খালার বাড়ীতে পলো বাওয়ায় এসে মাছ শিকার করতে পেরে নিজের খুবই ভালো লেগেছে। আমি দুটি মাছ শিকার করেছি।আমি আশাবাদী যুগযুগ ধরে এ পলো বাওয়া উৎসব চলমান থাকবে।
৭০ বছর বয়সি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মনোহর খান বলেন, পলো দিয়ে মাছ শিকার করা অন্য ধরনের এক আনন্দের ব্যাপার। তবে এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যায়না।পলো বাওয়ায় অংশ গ্রহন করতে দীর্ঘদিন পর এবার দেশে এসেছি। আর পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে মাছ শিকার করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে।