যেসব নেতার জন্য জান্নাত হারাম
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
আমানত একটি ব্যাপক শব্দ। যার মধ্যে মানুষের কথাবার্তা, লেনদেন, পরামর্শ, নসিহতসহ সব কাজকর্ম অন্তর্ভুক্ত। এককথায় মানষের পুরো জীবনটাই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আমানত। এ জন্যই পরকালে প্রতিটি কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে।
ইসলাম আমানত রক্ষার প্রতি অত্যন্ত জোর তাগিদ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতসমূহ প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)
আমানত বলতে আমরা কেবল টাকা-পয়সার বিষয়টি বুঝি; কিন্তু আমানতের অর্থ ও মর্ম ব্যাপক। এর ক্ষেত্র-পরিধি বিশাল।আল্লাহ প্রদত্ত সব কিছু আমাদের কাছে আমানত। সহায়-সম্পত্তি, সন্তান-সন্ততি, এমনকি আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও আল্লাহর দেওয়া আমানত। অর্পিত দায়িত্ব ও নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন আমানত। এ ব্যাপারে অবহেলা বেশি প্রকাশ পায়।
অথচ এর খিয়ানতের ভয়ে ইসলামের চার খলিফা সব সময় তটস্থ থাকতেন। তাঁরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এক পয়সাও যেন এদিক-সেদিক না হয় সেদিকে তীক্ষ নজর রাখতেন। ন্যায়-নীতি-নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠায় তাঁরা ছিলেন সদা প্রস্তুত। রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠন করে বিলাসবহুল জীবনযাপন মানে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও জনগণের আমানতের খিয়ানত করা।এই আমানত রক্ষার জন্য যোগ্যতা, সততা ও আল্লাহভীরুতা ছাড়াও প্রয়োজন হলো ভার বহনের সৎ সাহস।
প্রখ্যাত সাহাবি আবু জর গিফারি (রা.) একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাকে কোনো এলাকার শাসক নিযুক্ত করবেন না? তখন তিনি আমার কাঁধে আঘাত করে বলেন—‘হে আবু জর! তুমি দুর্বল। আর শাসনকার্য হলো একটি আমানত। নিশ্চয়ই তা হবে কিয়ামতের দিন অপমান ও লাঞ্ছনার কারণ। তবে সে ব্যক্তি নয়, যে তা যথার্থভাবে গ্রহণ করে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮২৫)
ইসলামে জনগণের সঙ্গে শাসকদের কোমল ব্যবহার করা, তাদের মঙ্গল কামনা করা, তাদের প্রতি স্নেহ পরবশ হওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এবং প্রজাদের ধোঁকা দেওয়া, তাদের প্রতি কঠোর হওয়া, তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করা, তাদের প্রয়োজন সম্পর্কে উদাসীন হতে নিষেধ করা হয়েছে। আনাস বিন মালিক (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক রক্ষককে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে এবং প্রত্যেক তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবককে তার তত্ত্বাবধান ও অভিভাবকত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন। যথার্থই কি তারা তাদের কর্তব্য পালন করেছে, অথবা অবহেলা হেতু তা বিনষ্ট করেছে?’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৪৯২)
নেতার মধ্যে দায়িত্বশীলতা ও নম্রতার গুণ থাকতে হবে। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘আমার এ ঘরে রাসুল (সা.)-কে দোয়া করতে শুনেছি—আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের যেকোনো কাজে দায়িত্বশীল হিসেবে নিযুক্ত হন এবং লোকদের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করেন, আপনিও তাঁর সঙ্গে নম্র ব্যবহার করুন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৭২২)
অপর হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান জনগোষ্ঠীর নেতা হন, অতঃপর তাদের সঙ্গে প্রতারণামূলক কাজ করেন এবং ওই অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়; তবে আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৫১)