মোবাইল চুরির অপবাদে গাছে বেঁধে যুবককে নির্যাতন: ভিডিও ভাইরাল

মোশাহিদুল ইসলাম, বাহুবল
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার যমুনাবাদ গ্রামে মোবাইল চুরির অপবাদে এক যুবকের ওপর চালানো হয়েছে পৈশাচিক নির্যাতন। মারধরের পর তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে নির্যাতিত যুবকের পরিবার। এরআগে গত ৮ মার্চ রাতে যমুনাবাদ গ্রামের আব্দুল কাইয়ূমের বাড়ি থেকে দু’টি মোবাইল চুরি হয়। পরদিন সন্দেহভাজন হিসেবে একই উপজেলার তারাপাশা গ্রামের কিম্মত আলীর ছেলে সহিদুলকে আটক করে মারধর করা হয়। তাকে চাপ প্রয়োগ করলে সে সদর উপজেলার বনদক্ষিণ গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে জাহেদ মিয়ার নাম বলে। এরপর উত্তেজিত লোকজন কটিয়াদি বাজার থেকে জাহেদকে ধরে এনে গাছে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
পরে তার পরিবারের লোকজন টাকা দেয়ার শর্তে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়া বলেন, ‘আমি কটিয়াদি বাজারে একটি দর্জির দোকানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ঘটনার দিন রাতে আমাকে ফোন করে নিয়ে যায় কয়েকজন। পরে তারা আমাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এ সময় আমি বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তারা আমাকে ছাড়েনি। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো চুরির সাথে জড়িত ছিলাম না। মূলত পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই আমার ওপর এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার ছোট বোন পিংকি আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই কোনো অন্যায় করেনি। মানুষকে দুইটা গালি-ঘুষি দিলে সবকিছু স্বীকার করে নেয়। অথচ আমার ভাইকে আগুনে পুড়ানোর পরও সে চুরি করেছে বলে স্বীকার করেনি। যদি সে চুরি করত, তাহলে অবশ্যই সে স্বীকার করত। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. অনুজ কান্তি দাশ বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের ১৫ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে যমুনাবাদ গ্রামে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ূমের বাড়িতে গেলে কোনো পুরুষ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। বাড়ির নারীরা জানান, সহিদুলের কথাতেই স্থানীয়রা জাহেদকে ধরে এনেছিল। উপস্থিত লোকজন তাকে মারধর করে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা এতে জড়িত না। জায়েদ মিয়া স্থানীয় কটিয়াদি বাজারের এম মাস্টার্স টেইলার্স ও মোছাব্বির ক্লথ স্টোরে দর্জি হিসেবে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক মোছাব্বির হোসেন বলেন, ‘জাহেদ একজন শান্ত স্বভাবের ছেলে। সে আমার দোকানে দর্জির কাজ করে। তার ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না। এ বিষয়ে লামাতাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.ক.ম উস্তার মিয়া তালুকদার বলেন, ‘আমার জানামতে, সহিদুল মোবাইল চুরির সাথে জড়িত। অবশ্যই কাজটি ঠিক হয়নি।
এ ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি দেখেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।