৪০ দেশে আমার লোকাল বন্ধু আছে
সম্প্রতি ইনাম আল হকের সঙ্গে অ্যান্টার্কটিকা ঘুরে এলেন। অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল? বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ অবসরের পর একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। কৌতূহল থাকে না, শরীর-মন একসঙ্গে বুড়ো হয়ে যায়। ইনাম ভাইকে দেখে এসব ধারণা পাল্টে যায়।
আশির কোঠায় এসেও তিনি যেভাবে তথ্য ঘেঁটে, বই পড়ে বিশ্লেষণ করেন, তা আমার মতো অনেককেই উজ্জীবিত করে। গ্যালাপাগোস, আমাজন, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া—সব ট্রিপেই তাঁর উদ্যম দেখে অবাক লেগেছে। দুই মাসে ২০ হাজার কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে ঘুরেছেন ক্লান্তিহীনভাবে! শুধু ফিটনেস থাকলেই এমনটা হয় না, ভেতর থেকে বিস্ময় আর ভালোবাসা থাকতে হয়। উনি ছিলেন বলে আমাদের ভ্রমণও সহজ হয়েছে।
গ্যালাপাগোসে
আপনি তো প্রায়ই বলেন, সারা পৃথিবী একটি দেশ। এই উপলব্ধি কেমন করে হলো? নানা, দাদা ব্রিটিশ ভারতে, মা-বাবা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, আমি বাংলাদেশে জন্মেছি। এই উপমহাদেশে দেশ বা রাজ্যের সীমা বারবার বদলেছে, বদলেছে ভূখণ্ডের মানচিত্রও। দেশপ্রেম আমার আছে, তবে রাজনৈতিক মানচিত্রের দেয়াল টেনে পৃথিবীকে ভাগ করা নিয়ে আপত্তি আছে।
যেমন—আফ্রিকা ১৯৪৭-এর আগে আলাদা কোনো দেশ ছিল না, এখন ৫৪টি দেশ। সীমান্ত টেনে দিলে বিভাজন বাড়ে, যুদ্ধ-ঘৃণাও বাড়ে। মহাসাগরগুলোরও একটিই জলরাশি, আমরা শুধু নাম দিয়েছি আলাদা। দেখুন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে এখন এক দেশের ভিসা থাকলে ৪০ দেশে যাওয়া যায়। আমার মনে হয়, যেখানেই জন্মাই, দেশকে ভালোবাসব। তবে পৃথিবীর অন্য প্রান্তকেও আপন মনে করার মানসিকতা দরকার, যাতে মানুষে-মানুষে ঘৃণা কমে, ভালোবাসা বাড়ে।
দেশ মানে কি একটি অনুভূতির নাম?
আমার খুবই প্রিয় ভূ-পর্যটক বিমল দে। তাঁর দাদা তো সারা পৃথিবী ঘুরেছেন। এখন ৮৬ বছর বয়স। উনি একবার বলছিলেন, ‘আমি সারা পৃথিবীর এত মানুষের বাসায় থাকলাম, এত মানুষের দেখা হলো, কত পথে নেমেছি। আমি কিন্তু একটিও খারাপ মানুষ দেখিনি।’ খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু মানুষের স্বভাবেই আছে অতিথিপরায়ণতা, সহানুভূতি। বাংলাদেশে কিংবা বিদেশে, অজপাড়া গ্রামে বা সীমান্তের কাছে—মানুষ সব সময় সাহায্য করেছে, পথ দেখিয়েছে, নিজেদের বাড়িতে জায়গা দিয়েছে। এই যে আমরা নিজেদের ‘বিশেষ’ ভাবি, সেটির কোনো দরকার নেই। নিজের দেশ-ভাষা-ভূখণ্ডকে ভালোবাসা জরুরি। তবে অন্যকে ছোট করা, সীমান্তের নামে মনের মধ্যে দেয়াল তোলা থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকা উচিত। অতিরিক্ত জাতীয়তাবাদ থেকেই বাধে যত বিপত্তি। আমি চাই, মানুষে-মানুষে দূরত্ব কমুক, ভালোবাসা বাড়ুক।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেন?
ছোটবেলায় যে বইগুলো পড়া হতো, ওগুলোর নায়করা কোথায় থাকেন? লেখকরা কোথায় থাকেন? সেসব জায়গায় যাওয়ার ভীষণ ইচ্ছা হতো। টারজান পড়ে আফ্রিকায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। পরে নানা তথ্যচিত্র দেখেও মনে হয়েছে এই জায়গাগুলোতে যাওয়া দরকার। তবে আমার পর্যটক হওয়ার পেছনে বই-ই এখন পর্যন্ত মূল কারণ। ইনাম ভাইয়ের সঙ্গে লিখেছেন ‘বাংলাদেশের পাখির ফিল্ড গাইড’। এই বইয়ের পেছনের গল্প জানতে চাই।
ইনাম ভাই অনেক উদার, আমাকে পাশে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। এই বইয়ের জন্য তাঁর ২০ বছর সময় লেগেছে। আমি মাত্র এক বছর সময় দিয়েছি। বইটির জন্য ছবি আঁকা, তথ্য জোগাড়—সবকিছুই কষ্টসাধ্য ছিল। আমরা কোনো বাণিজ্যিক লাভ ছাড়াই মানুষের জন্য কাজটি করেছি। বেশির ভাগ ছবিই শিল্পীদের আঁকা, বড় কম্পানির সৌজন্যে ফ্রি ব্যবহার করেছি। কারণ পাখি চেনা, পাখি নিয়ে কৌতূহল—এসব যেন সবার মধ্যে ছড়িয়ে যায়, এটিই উদ্দেশ্য। ঢাকা শহরেও এত ধরনের পাখি আছে, যা অনেকে জানেনই না। এ বইটি হাতে থাকলে সহজেই জানতে পারবেন। বাংলাদেশে এমন বই এটিই প্রথম। পৃথিবীর নানা জায়গায় ঘুরেছেন। নানান কিসিমের মানুষ দেখেছেন। সেই মানুষেরা কেমন?
ভ্রমণ আমার কাছে শুধু জায়গা দেখা নয়, মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া। যেখানেই গিয়েছি, মানুষের সঙ্গে ইন্টার্যাকশন না হলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ লাগে। এভাবে চলতে চলতে ৪০টির বেশি দেশে স্থানীয় বন্ধু তৈরি হয়েছে। ফোন দিলেই কেউ না কেউ পাশে থাকে। পথেই মেলে সত্যিকারের বন্ধু। কারণ পথেই মানুষ তার আসল রূপে থাকে। অফিসে বা বাসায় যেমন মুখোশ পরে থাকা যায়, পথে সেটি হয় না। দুর্দিনে, সমস্যায়, কষ্টে মানুষের সত্যিকারের রূপ দেখা যায়। অনেকবার দেখেছি, কিছুদিনের জন্য ঘুরতে গিয়ে প্রাণের বন্ধু হয়ে যাওয়া যায়। একেকটি জায়গার সংস্কৃতি আলাদা। সেসবকে কিভাবে মোকাবিলা বা একসেপ্ট করেছেন?
প্রতিটি সংস্কৃতি আলাদা, আর ডাইভারসিটির গুরুত্ব অনেক বড়। আমাদের দেশে অনেকেই এখনো বৈচিত্র্যকে স্বীকার করতে চায় না, অথচ পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য এই ডাইভারসিটি। কল্পনা করুন, যদি সব জায়গা নিউইয়র্কের মতো হতো, সাহারা শুধু বালুতে ভরা থাকত বা সবার পরিবেশ, রান্না, ভাষা এক রকম হতো, তাহলে কি ঘুরে দেখার কৌতূহল থাকত? আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলা, এমনকি পঞ্চগড় আর টেকনাফেও কত তফাত। এ জন্যই আমি মনে করি, ভ্রমণ মানুষকে শেখায় বৈচিত্র্যকে মেনে নিতে, নিজেকে ছাড়িয়ে ভাবতে। কোন দেশের সংস্কৃতি সবচেয়ে ভালো? এই প্রশ্ন অবান্তর। প্রতিটিই ইউনিক, কিন্তু আমার কাছে বেশি ভালো লাগে সেই জায়গা, যেখানে ছেলে-মেয়ে নির্বিঘ্নে, নিরাপদে চলাচল করতে পারে।
লেখালেখির পেছনে ভ্রমণের প্রভাব কতটুকু?
বই পড়ার অভ্যাস থেকেই লেখালেখির শুরু। ছোটবেলায় ভাবতাম, শুধু পাঠকই থাকব। পরে যখন নানা দেশে ঘুরে দেখলাম, মনে হলো, এই অভিজ্ঞতা ভাগ না করলে অপূর্ণ থেকে যায়। সরাসরি তো সবার সঙ্গে কথা বলা যায় না, কিন্তু লিখলে অনেকের কাছে পৌঁছানো যায়। তাই মনে হলো, যদি লিখি নানা দেশের ভ্রমণের গল্প, তবে অন্যরা স্বপ্ন দেখবে, নতুন কিছুর সন্ধান পাবে। লেখালেখি তাই ভ্রমণেরই বাড়তি বিস্তার।
ভ্রমণেও কি বই আপনার সঙ্গী হয়?
হ্যাঁ। যেখানেই যাই, সঙ্গে বই থাকে। যখন একেবারেই হার্ডকপি নিতে পারছি না, তখন কিন্ডল থাকে। লম্বা যাত্রায় বই পড়েই কাটে। তবে সব সময়ই একই ধরনের বই না। কোনো সময় একটু হালকা বই হয়, যেমন কমিকস বই। একই বই বারবারও পড়ি। পড়তে ভালো লাগে।
অ্যান্টার্কটিকা, গ্যালাপাগোস—এগুলোতে গিয়েছিলেন। তখন কোন ধরনের বই আপনার সঙ্গী ছিল?
সবচেয়ে প্রিয় ভ্রমণ বই চার্লস ডারউইনের ‘দ্য বিগল’। অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণের সময় সেটিই সঙ্গে ছিল। কখনো মার্কেজ, কখনো ‘পদ্মানদীর মাঝি’, আবার মাঝেমধ্যে ‘মাসুদ রানা’। পরিস্থিতি অনুযায়ী বই বদলায়। এক জায়গায় বসে প্রকৃতির মধ্যে ডুবে বই পড়ার মজাই আলাদা।
ভ্রমণগুলো কি হুটহাট হয়, নাকি অনেক পরিকল্পনা থাকে?
কিছু ভ্রমণ হুটহাট হয়ে যায়। কিন্তু অ্যান্টার্কটিকার মতো জায়গায় ভ্রমণের জন্য অনেক রকমের পরিকল্পনা লাগে। আর ওখানে যাওয়ার পর দেখলাম, আমার সামনে তিনটি অপশন। ডানে, বাঁয়ে, নাকি সোজা যাব। আমি সাধারণত খুব হোমওয়ার্ক করি। কেন যাব? ওখানে গেলে কী দেখতে পাব? কী দেখার আছে? না থাক। এদিকে না গিয়ে ওদিকে যাই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্ল্যান করি। জীবন খুব ছোট! প্ল্যান না করে গেলে ঘোরার জন্য এত সময় তো পাওয়া যাবে না।
ভ্রমণের চ্যালেঞ্জগুলো কী, ঘুরতে গিয়ে যেসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে, সেগুলো কিভাবে সামলান?
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভাষা। সব ভাষা তো জানা থাকে না। তবে ইন্টারনেট ও গুগল ট্রান্সলেটর থাকায় সমস্যা কমেছে। নিরাপত্তা নিয়েও ভাবি, আগে একটু স্টাডি করে যাই। কোথায় কী সাবধানতা দরকার। কিছু জায়গায় যেমন চুরি-ছিনতাই, প্লেনের ভেতরেও হতে পারে। আগে জানলে সাবধানে থাকা যায়। ঝুঁকি থাকবে সব জায়গায়ই, জানলে ও সতর্ক থাকলে সহজে সামলানো যায়। আমি মনে করি, একটু সচেতন থাকলে অনেক বাজে ঘটনা এড়ানো যায়। অ্যান্টার্কটিকা দেখতে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে এমন কী দেখেছেন, যাতে মনে হয়েছে এটি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
প্রায়ই এমন হয় একটি নির্দিষ্ট জিনিস দেখতে যাই, গিয়ে আরো অনেক নতুন সৌন্দর্যের মুখোমুখি হই। যেমন—পাপুয়াতে আমরা রাজা আমপাত এলাকায় গিয়ে পানির নিচের অবিশ্বাস্য দুনিয়া দেখেছিলাম। ম্যাজেন্টা-লাল প্রবাল, কোটি কোটি মাছ, কোরাল প্রাচীর, মানুষ, পাহাড়, পাখি—সব মিলিয়ে বিস্ময়কর। আমরা যে উপত্যকায় ছিলাম, পুরো ভ্যালিতে একজন মাত্র মানুষ টাকা গুনতে পারে। ওই অঞ্চলের মানুষও একেবারে সহজ, নিজেদের মতো জীবন কাটায়। ওরা আড্ডা দিচ্ছে, হয়তো একটু ঠাণ্ডা লাগছে, ধপ করে কাঠের খাটে ঘষে আগুন জ্বালিয়ে ফেলল। তারপর আগুন পোহাচ্ছে। একদম আদিম মানুষের মতো তাদের জীবনযাপন। এমন অনেক অনেক সুন্দরের দেখা পেয়েছি, যা দেখে মনে হয়েছে জীবন সুন্দর। এমন অনেক অভিজ্ঞতা হয়, যা আগাম ভাবিনি। এসব হঠাৎ পাওয়া মুগ্ধতাগুলো জীবনের বড় প্রাপ্তি বলে মনে হয়।
দুর্গম জনমানবহীন কিংবা গভীর নির্জনতার মুখোমুখি হয়ে কী ভাবনা কাজ করে?
এসব স্থানে গিয়ে বরং পৃথিবী আর জীবনকে নতুন করে আবিষ্কার করি। কতটা বৈচিত্র্য, কতটা সৌন্দর্য! হিমালয়ের ভেতরে বা শত মাইলজুড়ে নিস্তব্ধতায় বোঝা যায় আমি কত ক্ষুদ্র, অথচ এই বিস্ময় উপভোগ করার জন্যই হয়তো এখানে আসা। তখন শুধু কৃতজ্ঞতা আর মুগ্ধতাই মনে জাগে, কোনো হাহাকার বা আফসোস নয়।
এমন কোনো স্মৃতি আছে, যেটি কখনোই ভুলতে পারবেন না?
জীবনে প্রথমবার স্কুবা করেছিলাম কিউবায়। পানির নিচের জগতে যে কত রকমের কোরাল মাছ আছে, তা ওই প্রথমবার দেখলাম। পরে যখন গ্যালাপাগোসে গেলাম, তখনো আমরা পানির নিচে নেমে একই সঙ্গে কচ্ছপ, পেঙ্গুইন, সাগরের গিরগিটি, সিল মাছ, প্রবাল একসঙ্গে দেখেছি। এই স্মৃতি কখনো ভোলার নয়।
অ্যান্টার্কটিকার মতো শীতল স্থানেও ঠাণ্ডা জলে নেমে স্নান করেছিলেন?
এখানে একটি ফাঁকি আছে। যেহেতু ফিনল্যান্ডে বড় হয়েছি, আমরা ফ্রোজেন লেকে প্রায়ই সাঁতার কাটতাম। ফাঁকিটা হচ্ছে কি, বাইরের টেম্পারেচার অনেক ঠাণ্ডা। মাইনাস ৩০। মাইনাস কিন্তু যেকোনো সময় প্লাস ফোরের নিচে নামতে পারে না। বেইসিকিল পানি কিন্তু গরম। ঠাণ্ডা থেকে যখন পানির ভেতরে যাবেন, আপনার অত ঠাণ্ডা লাগবে না। তবে মনে মনে ভয় লাগবে যে ঝাঁপ দেব! ঠাণ্ডা লাগবে তো।
ভ্রমণে দুঃসহ স্মৃতিও তো কিছু হয়েছে…
কিছু স্মৃতি কষ্টের হলেও সেগুলো ধরে রাখি না। টাকা, পাসপোর্ট, মোবাইল হারানোর ভয়, অসুস্থতা—এসব নিয়ে সব সময় সচেতন থাকি। তিব্বতে একবার পাহাড়ে হাই সিকনেসে পড়েছিলাম, কয়েক দিন তাঁবুতে থাকতে হয়েছিল। তবে সব সময় চেষ্টা করি ভালো স্মৃতিই মনে রাখতে। পৃথিবীতে একই সময়ে এক জায়গায় রাত, আরেক জায়গায় দিন। এই যে একটি ছন্দ, এটি আপনার মনোজগতে কিভাবে প্রভাব ফেলে?
এটিই তো পৃথিবীর সুন্দর হারমনি। একদিকে রাত, আরেক দিকে দিন। কখনো বন্ধু ফোন করে তাসমানিয়া থেকে, কখনো আলাস্কা থেকে, কেউ ভোরের আলো দেখছে, কেউ গভীর রাতে। উত্তর-দক্ষিণ মেরুতে ২৪ ঘণ্টার দিন-রাত, ফিনল্যান্ডে ২২ ঘণ্টার দিন। সব মিলিয়ে বৈচিত্র্যের এ ছন্দ আমার খুব ভালো লাগে।
কোন পাঁচটি জায়গা বেশি ভালো লেগেছে?
আমার সবচেয়ে প্রিয় দেশ কিউবা, তারপর মেক্সিকো আর উজবেকিস্তান। এই তিনটি দেশের মানুষের আন্তরিকতা, খাবার, ইতিহাস, বৈচিত্র্য—অসাধারণ। শহরের কথা বললে ফ্লোরেন্স আমার চিরপ্রিয়, ওদের শিল্প-সংস্কৃতি আর ইতিহাসের জন্য বারবার যেতে ইচ্ছা হয়। শিলং, লাদাখ, কেপটাউন, টাঙ্গুয়ার হাওর—এসব জায়গায় মন পড়ে থাকে। বিশেষ করে রাজশাহী, পদ্মা নদী, টাঙ্গুয়ার হাওর কিংবা নিজের গ্রামের প্রকৃতি—এসব জায়গা আমার কাছে মায়ার, শান্তির। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এসব জায়গায় সারা জীবন থেকেও মন ভরবে না। মানুষের জন্মভূমির প্রতি যে টান, তা সবকিছু ছাপিয়ে যায়।
অভিযাত্রী তারেক অণু হওয়ার পেছনে মায়ের ভূমিকা কেমন?
উনি আমার মা না হলে আমি আজকের আমি হতাম না। এটি অকপটে বলি। ছোটবেলায় তাঁর চাকরি করার ফলে আমার হাতে যত বই এসেছে, সেটি না হলে এই পথেই আসতাম না। তাঁর উদারতা, আমাকে নিজের মতো থাকতে দেওয়া, স্বাধীনভাবে চলার সুযোগ—সবকিছুই আমাকে বদলে দিয়েছে। বেশির ভাগ পরিবারে প্রাইভেট স্পেস খুব একটা দেওয়া হয় না, কিন্তু মা সব সময় দিয়েছেন। তাঁর কারণে আমি নিজের মতো করে বাঁচতে শিখেছি, নতুন কিছু করার সাহস পেয়েছি।