জাতিসংঘে বিশেষ এক মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ
দৈনিক সিলেট ডট কম
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : গেল বছরে জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিজের অবস্থানকে আরো সংহত করেছে। আন্তর্জাতিক ক’টনীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব সমাদৃত হচ্ছে। আর এ কৃতিত্ব জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের। সমন্বয় করেছে ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ মন্ত্রে উজ্জীবিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী নতুন বছরেও বাংলাদেশ মিশন দেশের ইমেজ সমুন্নত রাখতে বদ্ধ পরিকর। এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
২ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে গেল বছরের কর্মকান্ডের আলোকে মিডিয়ার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাষ্ট্রদূত মাসুদ প্রবাসের গণমাধ্যমগুলোর সহযোগিতার কথাও স্মরণ করেন। নতুন বছরেও বাংলাদেশের ইমেজ আরো উর্দ্ধে উঠাতে সকলের সহায়তা প্রত্যাশা করেন। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ শুভেচ্ছা-বিনিময় পর্বের সঞ্চালনা করেন মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর এলাহি মিনা। উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো: আরিফুল ইসলামও গেল বছরের মিশনের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। এ সময় বাংলাদেশ মিশনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ছাড়াও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান এনডিসিও ছিলেন।
গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, এবারের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত সফল ও তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে। ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটার পরপরই আমরা জাতিসংঘে এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করি, যদিও আমরা প্রথম দিক সমস্যার ব্যাপ্তি এ পর্যায়ে যেতে পারে তা অনুধাবন করতে পারিনি। প্রথমদিকে আমরা নিউইয়র্কস্থ ওআইসির রোহিঙ্গা মুসলিম মাইনোরিটি গ্রুপের মাধ্যমে ক’টনৈতিক তৎপরতা শুরু করি। সৌদিআরবের স্থায়ী প্রতিনিধির নেতৃত্বে আমরা আরও কয়েকটি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একত্রে জাতিসংঘের মহাসচিব, নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট এবং সাধারণ পরিষদের প্রেসিডন্টের সঙ্গে দেখা করে তাঁদেরকে সমস্যার বিষয়ে অবহিত করি এবং এর সমাধানে তাঁদের উদ্যোগ গ্রহনের অনুরোধ জানাই। রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, ফলশ্রুতিতে বিষয়টি জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং বৃহত্তর পরিসরে আলোচনায় আসতে শুরু করে। জাতিসংঘের মহাসচিবের রোহিঙ্গা বিষয়ে শক্ত অবস্থান এবং তাঁর নিজস্ব উদ্যোগ এক্ষেত্রে একটি বিরাট নিয়ামক হিসাবে কাজ করে।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, এবার নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের অর্জনের দিকে ফিরে তাকাই। আপনারা জানেন যেখানে ২০০৯ সাল হতে জাতিসংঘে মিয়ানমার বিষয়ে কোন মুক্ত আলোচনা হয়নি সেখানে ২৮ সেপ্টেম্বর তা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৫ আগষ্টের পর বিভিন্ন ফরম্যাটে নিরাপত্তা পরিষদে সাতটি সভা হয়েছে, বড় দুিট পরাশক্তির বিরুদ্ধ মতের পরেও যা অভূতপূর্ব। নিরাপত্তা পরিষদ হতে এ পর্যন্ত রেজ্যুলেশন হয়নি ঠিক, যার কারণ আপনারা জানেন, তবে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট পর্যন্ত হয়েছে। এগুলো সবই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ক্রমাগ্রসরমান পদক্ষেপ। আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আমাদের পক্ষে পরিবর্তিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক এ সংস্থায় বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমার বিস্তৃতি ও স্বীকৃতি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল আখ্যা দিয়েছেন। এরপর এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের অগ্রগতি উপস্থাপন করেছি। সবাই এর প্রশংসা করেছে। আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন-প্রচেষ্টা বিশ্বমহলে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে।
‘সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে অটিজম, যুব উন্নয়ন,ড্রাগ ব্যবহার প্রতিরোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজেবিলিটি, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের অর্জন জাতিসংঘে নানাভাবে স্বীকৃত হয়েছে। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি রক্ষা বিনির্মানে আমাদের অবদান সর্বজনবিদিত’-উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত গণহত্যা আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে বছরব্যাপী নানাবিধ কাজ করেছে বাংলাদেশ মিশন-এ তথ্য জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘের যেসকল রাষ্ট্র গণহত্যার শিকার হয়েছে তারা কিভাবে বিষয়টি আন্তর্জাতিকীকরণ করেছে এ বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জেনেছি; তাদের সুপারিশ নিয়েছি; তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছি এবং জাতিসংঘের গণহত্যা দিবস উদ্যাপনে অংশগ্রহন করেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বাণী তাঁদেরকে প্রেরণ করেছি; এছাড়া গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসংঘ দফতরের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করেছি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাধারণ পরিষদের ভাষণে এই প্রথম বারের মত আমাদের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবী করেছেন যা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ প্রভাব ফেলেছে।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে, জাতিসংঘে বাংলাদেশ এখন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিভিন্ন কর্মকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে। বিশেষ এক মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হচ্ছে কীভাবে, সেটি এখন অনেকের কাছেই বিস্ময়ের ব্যাপার।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ২০১৭ সালের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও অর্জনের বিষয়ে মিশনের
উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো: আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বছরব্যাপি চেষ্টা করেছি জাতিসংঘে আমাদের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম, অবদান বা অর্জনকে মিডিয়ার মাধ্যমে সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছাতে। গতবছর আমাদের এ প্রচেষ্টা বিগত অনেকগুলো বছরের তুলনায় বেশী ছিল, এটি নিশ্বয়ই সকলে স্বীকার করবেন। আমাদের পক্ষ হতে আরও ভাল মিডিয়া আউটরীচ করা উচিত ছিল যা আমরা এবছর করার চেষ্টা করবো। আমরা এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি এবং আরও বেশী সহযোগিতা পাবার আশা রাখছি।’
‘রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আমাদের এ ইতিবাচক ভূমিকা জাতিসংঘসহ সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উদার দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় বার বার বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। যা আমাদেরকে আরেকটি নতুন পরিচয়ে অভিষিক্ত করেছে। কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে অধিকতর মর্যাদার আসনে আসীন করেছে’-উল্লেখ করেন আরিফুল ইসলাম।