মিছিলে মিছিলে উত্তাল সিলেট: কেএফসিতে ব্যাপক তাণ্ডব

দৈনিকসিলেটডেস্ক
সিলেট নগরে দুপুরের বিক্ষোভ বিকেলে রূপ নেয় তাণ্ডবে। তৌহিদী জনতার ব্যানার থেকে নগরের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় নগরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন- ভাংচুরের সময় ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার সূত্রপাত নগরের মীরবক্সটুলা থেকে। বিকেল ৩ টায় তখন মীরবক্সটুলা এলাকা পাড়ি দিচ্ছিলো ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে একটি মিছিল। ওই মিছিল থেকে মীরবক্সটুলায় থাকায় কেএফসিতে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। সড়ক থেকে কেএফসিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তৌহিদী জনতা। এক পর্যায়ে তারা ভেতরে ঢুকে ইসরাইলী পণ্য রাখার অভিযোগ ভাংচুর চালায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- ভাংচুর চলার সময় কেএফসির মালামাল লুট করা হয়। এ ঘটনায় মীরবক্সটুলা এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। পরে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনার পরপরই নগরের বাটা জুতার সব শোরুমে একযোগে ভাংচুর করা হয়। মুখোশপড়া একদল লোক মিছিল সহকারে এসে নগরের জিন্দাবাজার, পূর্ব জিন্দাবাজার, দরগাহ গেইট, আম্বরখানা সহ কয়েকটি স্থানে ভাংচুর করে। একই সঙ্গে আম্বরখানার ইউনিমার্ট, বাটাসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করা হয়।
এদিকে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে দায়ি করছে নেটিজেনরা। তারা মনে করছে, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অনুসারীরা এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে।
এদিকে- ভাংচুর শুরু হওয়ায় নগরের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ইসরায়েলী আগ্রাসনের প্রতিবাদে দুপুর থেকে রাস্তায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। বিকেলে নগরের ব্যবসা প্রতিষ্টানে হামলা হওয়ার কারনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। মালামাল লুট হওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান। সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যান পরিষদের মহাসচিব আব্দুর রহমান রিপন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সবখানেই আতঙ্ক। এটা কোনো পরিকল্পিত তান্ডব হতে পারে। এই তান্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি দাবি করেন- নগরের অর্ধশতাধিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুট করা হয়েছে।
নগরের পূর্ব জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- মুখোশ পড়া কিছু যুবক বিকেলে এসে বাটার শোরুম ভাংচুর করে। পরে আরেক দল এসে লুট করে। অল্প বয়সী কিছু কিশোর এসে মালামাল বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে করে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলী আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিকেলে নগরে মিছিল বের করে বিএনপি। তারা নগরের কোর্ট পয়েন্ট থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল করে আম্বরখানায় গিয়ে শেষ করে। এ সময় সিলেট নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান লোদী কয়েস জানিয়েছেন- ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়টি জানার পর সিলেট বিএনপি’র নেতারা বিভিন্ন জায়গয় গিয়ে সেগুলো থামানোর চেষ্টা করেন। তাদের চেষ্টার কারনে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান রক্ষা পেয়েছে।
তিনি বলেন- পরিবেশকে অশান্ত করে পরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্টি এই ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। তাদের ভাংচুরের ফলে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এদিকে বিকেলে ভাংচুরের খবর পেয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় যান সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি নিজে গিয়ে ভাংচুর ঠেকানোর কার্যক্রম চালান। এ সময় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- যারা ভাংচুর ও লুটপাট করছে তারা দুর্বৃত্ত। এরা সিলেটকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এ কারনে তারা ক্ষোভকে পুজিকে ভাংচুর চালিয়েছে বলে জানান তিনি।
সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউল হক জানিয়েছেন- যেখানে ভাংচুরের খবর পেয়েছে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
এদিকে সোমবার দুপুর থেকে সিলেটের রাজপথ বিস্ফোন্মুখ হয়ে উঠে। মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠে সিলেট নগর। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, জমিয়ত, আল ইসলাহ-তালামিযের পক্ষ থেকে বিশাল বিশাল মিছিল বের করা হয়। এছাড়া সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এলাকা ভিত্তিক মিছিল বের করা হয়। প্রতিটি মিছিলের গন্তব্যস্থল ছিলো নগরের কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা ও আম্বরখানা। এসব এলাকায় জড়ো হয়ে তৌহিদী জনতা সমাবেশ করে।
অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ সিটিজেন সলিডারিটি মুভমেন্ট ও বাংলাদেশ স্টুডেন্ট ইউনিটির পৃষ্টপোষক এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান বলেছেন, গাজা ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলা আজ মানবতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। গণ-প্রার্থনা শেষে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশ সিটিজেন সলিডারিটি মুভমেন্ট’র নেতাকর্মীরা নগরীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। গাজাবাসীর আহ্বানে বিশ্বব্যাপী হরতালের ন্যায় দূর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে হরতালের সমর্থনে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজপথে অবস্থান নেন। সকাল ১০টায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সামনে গণজমায়েত ও একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজপথ প্রদক্ষিণ করে সিটি পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরী।
এসময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন মদন মোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রোটারিয়ান অধ্যাপক আতাউর রহমান পীর, দূর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন প্রমুখ। সিলেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ২টায় নগরীর সুরমা পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট মহানগর সভাপতি ডাঃ রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ এর সভাপতিত্বে ও জয়েন্ট সেক্রেটারি প্রভাষক বুরহান উদ্দিনের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বিভাগীয়) হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান এলএল.বি।
তথ্যসূত্র:মানবজমিন