যাদুকাটা নদী, ফাজিলপুর কোয়ারী চালু হওয়ায় শ্রমিকের স্বস্তি
দীর্ঘ ৫ মাস পর আদালতের রায়ে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ও ফাজিলপুর কোয়ারী চালু হওয়ায় কর্মহীন ৫০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ঈদের আনন্দের জোয়ার বইছে। একেই সাথে নদী ও কোয়ারী সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদার, ব্যবসায়ীদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কায্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মেয়াদে যাদুকাটা-১, যাদুকাটা-২ নামের দুটি বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে যাদুকাটা-১ ইজারা নেন তাহিয়া স্টোন ক্রাশারের মালিক নাসির মিয়া (৩৩ কোটি টাকা), যাদুকাটা ২ ইজারা নেন মেসার্স জিনান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. রুবেল মিয়া (৫৫ কোটি টাকা। তবে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ছয় মাসের জন্য ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ১লা বৈশাখ ১৪৩২ বাংলা (১৪ এপ্রিল ২০২৫ইং) থেকে ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বাংলা (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইং)পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এ কারনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। শুধু শ্রমিকই নয়, চরম ক্ষতির মুখে পড়ে নদী-নির্ভর স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরাও। এছাড়াও এই নদী সংশ্লিষ্ট ফাজিলপুর টুলট্যাক্স, রয়েলিটি ইজারা আনা ইজারাদারগন। অপর দিকে যন্ত্রচালিত নৌকা, পরিবহন খরচ, খাদ্য, চিকিৎসা সব কিছুতেই টান পড়ে।
নদীটি খুলে দেয়ার পর যাদুকাটা নদীর পাড়ের বাসিন্দা ও শ্রমিকরা জানায়, গত ৫ মাস ধরে নদীতে কোন কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছেন তারা। নদীটি চালু হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে প্রান চঞ্চল ফিরেছে, নদী খুলে দেয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাজার হাজার শ্রমিকগন। অথচ যুগের পর যুগ সনাতন পদ্ধতিতে বালু তোলার কাজ করে জীবিকা নির্ভর নদী পাড়ের শ্রমিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা ছিল। বিকল্প কোন কর্মসংস্থান না থাকায় ঘরের খাবার জোটাতেই কষ্ট কর ছিল। অনেকেই খাবার জোগার করতে না পারায় কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। নদী খুলে দিয়ে কাজের সুযোগ করে দিতে নদী পাড়ে মানববন্ধন করেছিল হাজারো শ্রমিকরা।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা জহির মিয়া বলেন, নদীই থেমে গেলে আমার মত হাজারো শ্রমিকের জীবিকার চাকা থেমে যায়। গত ৫ মাস খাবার সংগ্রহ করাই কষ্টের ছিল শ্রমিকদের। এখন নদী খুলে দেয়ার সেই দুঃখের দিন শেষ হয়েছে। কাজ করে টাকা উপার্জন করতে পারবো আর ছেলে মেয়ে নিয়ে চলতে পারবো।
বালু শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, নদী চালু হওয়ায় ৬-৭ টাকা উপার্জন করে ভাল ভাবেই চলতে পারবো। আমাদের খেয়ে না খেয়ে দিন পার করার সময় শেষ হয়েছে,নদী আবারও চালু হওয়ায়।
ফাজিলপুর নৌকাঘাটের ইজারাদার জবা মিয়া জানান, দীর্ঘদিন বালু পরিবহণ বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছি। আজ যাদুকাটা নদী চালু হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে এতে সবাই খুশি।
যাদুকাটা নদীর ইজারাদার মো নাছির মিয়া বলেন, যাদুকাটা নদী সরকারের রাজস্ব আদায়ের বড় একটি খাত, নদীটি ইজারা নেয়ার পর থেকে বন্ধ থাকায় এ বছর আমাদের লোকসান হবে। চালু হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি আর শ্রমিকরাও কাজ করতে পারবে।
সুনামগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম(রাজস্ব) জানান, আদালতের নির্দেশনা মেনে যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে চলবে।