বরকতময় প্রথম জুমা আজ

মুফতি হুমায়ুন আইয়ুব
আজ রমজানের প্রথম জুমা। বরকতময় জুমা। সওয়াবের বসন্তপ্রবাহ। জুমার দিনে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা, দান-সদকা ও দরুদ শরিফের আমল করার কথা আছে। এ ছাড়া দিনটির বিশেষ গুরুত্ব কোরআন হাদিসে এসেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। এরপর নামাজ শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যেন তোমরা সফলকাম হও। সুরা জুমা : ৯-১০
জুমার দিনের ফজিলত বিষয়ে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সব দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনেই আদমকে (আলাইহিস সালাম) সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। এ জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। বুখারি-১৫০২
আজ রোজার ষষ্ঠ দিন। চারদিকে রহমতের উৎসব। রমজানের অবারিত রহমতে ভরে যাক আমাদের জীবন। যে কোরআনের প্রেমময়তায় আজ রমজান রহমতে ভরপুর, কোরআনের মুগ্ধতায় লাইলাতুল কদর হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ রাত। কোরআন এসেছিল বলে মক্কা-মদিনা পৃথিবীর মর্যাদাবান শহর। কোরআনের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবীদের সরদার! কোরআনের সেই প্রেম, মুগ্ধতা ও মর্যাদা আমাদের কতটা আলোকিত করেছে?
মাস, রাত আর মক্কা-মদিনার মর্যাদা বাড়াতে কোরআন আসেনি পৃথিবীতে। কোরআন এসেছে মানুষের জীবন রাঙাতে। শুধু রাত শ্রেষ্ঠ হবে না; কোরআনের মানুষরাও হবে আশরাফুল মাখলুকাত। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ। কোরআন- সে তো আল্লাহ প্রেমের চিঠি। পাঠে পাঠে সজীব হয় দেহমন। জোগায় আত্মিক শক্তিও। প্রেমের চিঠি প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালাও বলেন, যারা ঈমানদার, তারা যখন আল্লাহর নাম নেয়, নরম হয় তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে কোরআন পাঠ করা হয়, তাদের ইমান সজীব হয়ে ওঠে। তারা মওলার প্রেমে আত্ম নিবেদিত হয়। সুরা আনফাল : ২
পবিত্র রমজানে পৃথিবীর ২৫ লাখ মসজিদে কোরআনুল কারিম তেলাওয়াত হয়। এ দেশের প্রায় ৫ লাখ মসজিদে তারাবির নামাজেও ভাব আবেগ ও মুগ্ধতায় পাঠ হয় পবিত্র কোরআন। হজরত রাসূল (সা.) বলেন, কোরআন তেলাওয়াতকারী প্রতিটি বর্ণে ১০টি সওয়াব পায়। আমি বলছি না, ‘আলিফ লাম মিম’ এর মধ্যে একটি অক্ষর। বরং আলিফ আলাদা, লাম আলাদা, মিম আলাদ বর্ণ। সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৩০৭৫ প্রতিটির জন্য ভিন্ন সওয়াব। কোরআনের উৎসবমুখর মাস রমজান। মানুষ হেদায়াতের প্রত্যাশায় মুখিয়ে থাকে। রমজানে মসজিদ ভরে যায় মুসল্লিতে। ফরজ নামাজ তো বটেই, তারাবি হয়ে ওঠে কোরআনের উৎসব। ইফতার উপলক্ষেও কানায় কানায় ভরে যায় মসজিদ। রোজার জুমায় মানুষের ঢল। কিয়ামুল লাইল বা শেষ রাতের তাহাজ্জুদেও মসজিদ প্রাণবন্ত থাকে। মসজিদমুখী মানুষরা কোরআনের আলোয় জীবন রাঙাতে চায়। হেদায়াতের নেশায় ব্যাকুল মানুষরা শুনতে চায় কোরআনের মর্মকথা। কোরআনের ইতিহাস ও গল্পে ফিরে যেতে চায় আগের নবী-রাসুলদের জীবনে। জান্নাতের হৃদয়কাড়া বর্ণনা ও জান্নামের ভয়াবহতা কোরআনের ভাষায় স্বাদ নিতে চায়। কোরআনের পরিবার ও সমাজ নীতি শিখতে চায় মুসল্লিরা। ইসলামের জীবন সৌন্দর্য কোরআনে কীভাবে আছে? আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনায় কোরআনের মনোভাব কী? এমন সব প্রশ্নের জবাব জানতে আগ্রহী মানুষরা। আল্লাহর প্রেমে মজে থাকার এই প্রেমপত্র পাঠ করে বুঝতে চায় অভাগারা। কিন্তু কই? কে শোনাবে তাদের কোরআনের গল্প? কে দিবে কোটি পিপাসিত হৃদয়ে কোরআনের ছবক? দেশের প্রতিটি মসজিদে মসজিদে ইমাম-খতিব, বিজ্ঞ আলেম, মুফতি, মুফাসস্রিগণ যদি মসজিদমুখী মানুষের এই প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসতেন। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি মানুষকে কোরআনের ছাত্রে পরিণত করতেন। তাহলে মানুষ কোরআন চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে উঠত।
একটি আয়াতের জন্য সাহাবিরা দিনের পর দিন পথে অপেক্ষার কষ্ট আমরা কী অনুভব করতে পারব? আল্লাহ বলেন, ‘এক কল্যাণময় কিতাব আমি অবতীর্ণ করেছি, যেন মানুষ কোরআন অনুভব করে। বোধসম্পন্ন ব্যক্তিরা তা উপদেশ হিসেবে গ্রহণ করে।’ সুরা সদ : ২৯
প্রভু! কোরআনের মর্মোপলব্ধি করার শক্তি দাও আমাদের।
শিক্ষক : শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া ঢাকা।