রমজানে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধির উপায়

ইসলাম ডেস্ক
পবিত্র রমজান মাসে বান্দা তার রবের খুব নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ লাভ করে। রবের নিকটবর্তী হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো রোজা রাখা। কেননা রোজা রাখার জন্য বান্দা শেষ রাতে সেহরি খেতে ওঠেন। এ সময় মুমিনরা তাহাজ্জুদ নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন। এ ছাড়া ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য দোয়া করে থাকেন। এর ফলে বান্দা তার রবের নিকটবর্তী হতে পারে।
ইবাদতের উদ্দেশ্যে পবিত্র রমজান মাসে রাত্রিজাগরণ, মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ভালোবাসা ও আগ্রহ বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। কেননা, এতে হৃদয়ের নিফাক ও কপটতা দূর হয় এবং ঈমানের বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, রমজান মাস- যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন এ সময় অবশ্যই রোযা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ সেটাই চান, তোমাদের জন্য জটিলতা চান না, এবং (তিনি চান) যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূরণ করে নাও এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে পথ দেখিয়েছেন, সেজন্য আল্লাহর তাকবীর পাঠ কর এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা বাকারা – ১৮৫)
আল্লাহ বলেন, আর যারা সুপথ প্রাপ্ত হয়েছে, তিনি তাদের সুপথে চলার প্রেরণা বাড়িয়ে দেন এবং তাদের তাকওয়া দান করেন। (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৭)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, যেন তাদের ঈমানের সাথে ঈমান আরও বৃদ্ধি পায়। (সূরা ফাতহ, আয়াত, ০৪)
বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা
আল্লাহর জিকির ঈমানকে বৃদ্ধি করে। আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে তাসবিহ, তাকবির, তাহমিদ, তাহলিল পাঠের মাধ্যমে জিহ্বা সতেজ রাখতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)
ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা
ধর্মীয় বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর বলুন হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (সূরা তহা, আয়াত : ১১৪)
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা যদি না জানো, তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করে। (সূরা নাহল, আয়াত : ৪৩)
দান-সদকা ও জাকাত-ফিতরা আদায় করা
রাসূল সা. রমজানে অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় বেশি দান করতেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন যখন জিবরিল আ.-এর সাথে দেখা হত। জিবরিল আ.-এর সাথে দেখা হলে তিনি হয়ে উঠতেন মুক্ত বাতাসের চেয়েও দানশীল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮০৩)
আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করা
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর তারা আসমান-জমিনের সৃষ্টি (রহস্য) নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। (এক সময় তারা বলে উঠে) হে আমাদের প্রতিপালক, এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। ( সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১৯১)
কোরআন তিলাওয়াত করা
পবিত্র কোরআনের প্রতিটি শব্দ, বাক্য ও আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা, কোরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং সেই শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এটা এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি অবতীর্ণ করেছি। যেন লোকেরা এর আয়াতগুলো অনুধাবন করতে পারে এবং বোধসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা সোয়াদ, আয়াত : ২৯)
বেশি বেশি নফল নামাজ ও নফল ইবাদত করা
বেশি বেশি নফল নামাজ ও নফল ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। এ ছাড়া এর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।
জামাতে নামাজ আদায় করা
আল্লাহ তায়ালা বলেন, নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। (সূরা নিসা, আয়াত : ১০৩)
পবিত্র কোরআনের অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর জিকির তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)