ঢাকা শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

রিমা সিনহা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা । ঐতিহ্যে লালিত এই শহর সম্পর্কে জানার আছে অনেক কিছু। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমার ঢাকা নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলাদেশের এই বৃহত্তম জনবসতিপূর্ণ শহর এর ব্যাপারে জানতে প্রতিবেদনটি শেষ অবধি পড়ার অনুরোধ রইল।
১৬১০ সালে সুবেদার ইসলাম খান চিশতি ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থানান্তর করেন। প্রথমবারের মত ঢাকা রাজধানী হওয়ার মর্যাদা লাভ করে। তিনি মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে ঢাকার নামকরণ করেন জাহাঙ্গীর নগর। পরবর্তী সময়ে রাজা বল্লাল সেন নির্মিত ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নাম থেকে ঢাকা শব্দের উৎপত্তি।
অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন, তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্দির রূপ ধারণ করে এবং তা থেকেই এই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়।
ঢাকা কি জন্য বিখ্যাত?
ঢাকা বিখ্যাত অনেক কারণে, যেমন:
ঢাকা শহর
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এবং একটি বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা।
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মহানগরগুলির মধ্যে একটি ঢাকা।
ঢাকা বিশ্বের রিকশা রাজধানী নামে পরিচিত।
ঢাকা জেলা বিখ্যাত মূলত কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এবং ঢাকা জেলার বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানের জন্য।
ঢাকায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, হাতিরঝিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, তারা মসজিদ, ঢাকেশ্বরী।
ঢাকার জামদানি শাড়ি, বেনারসী শাড়ি, বাকরখানি এবং বিরিয়ানি জন্য ঢাকা জেলা সারা বাংলাদেশে বিখ্যাত।
ঢাকার প্রাচীন নাম জাহাঙ্গীরনগর।
ঢাকার ঐতিহাসিক পুরাতন শহরকে বোঝাতে পুরান ঢাকা শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
ঢাকায় অনেক বাগান ও উদ্যানসহ অনেক পুরানো সবুজের বনায়ন রয়েছে।
ঢাকা শহর “মসজিদের শহর” নামেও সুপরিচিত। এখানে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর তথ্য মতে)।
এই শহরে রোজ প্রায় ৫ লক্ষ রিকশা চলাচল করে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বাণিজ্যকেন্দ্র।
ঢাকার সবচেয়ে বিশিষ্ট স্থাপত্য নিদর্শন হল আধুনিকতাবাদী জাতীয় সংসদ ভবন; যেখানে মুঘল ও ব্রিটিশ আমলের 2000টি ভবনের ঐতিহ্য রয়েছে।
ঢাকা শহরকে “মসজিদের শহর” বলা হয়। এখানে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে।
ঢাকা কেন স্পেশাল?
শহরটি মুঘল সাম্রাজ্য, ব্রিটিশ রাজ এবং পাকিস্তানি সামরিক শাসন সহ বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সাম্রাজ্য এবং রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে। ঢাকা তার প্রাণবন্ত সংস্কৃতির জন্য পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য এবং খাবার।
ঢাকা কি নদী বেষ্টিত?
বুড়িগঙ্গার তীরে মুঘলদের প্রতিষ্ঠিত ঢাকা শহর মালার মতো ছয়টি নদী বেষ্টিত । পূর্বে বালু ও শীতলক্ষ্যা, পশ্চিমে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা, উত্তরে টঙ্গীর খাল এবং দক্ষিণে ধলেশ্বরী।
ঢাকা জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি,
ঢাকা জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন:
নবাব আবদুল গনি (১৮৩০-১৮৯৬)
নবাব খাজা আহসান উল্লাহ (১৮৪৬-১৯০১)
নবাব সলিমুল্লাহ (১৮৭১-১৯১৫)
কায়কোবাদ প্রথম মুসলিম কবি
শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬)
আজম খান (১৯৫০-২০১১)
আব্দুর রহমান বয়াতী (১৯৩৯-২০১৩)
শৈলেশ দে
বেনজির আহমেদ সাবেক সংসদ সদস্য ঢাকা ২০
সাইফুল ইসলাম সাবেক সংসদ সদস্য ঢাকা ১৯
ঢাকা জেলার মানচিত্র,
ঢাকার মানচিত্র
ঢাকার ইতিহাস,
ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিষয়ে কিছু তথ্য:
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী ও দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মহানগরগুলির মধ্যে একটি।
ঢাকার বয়স আড়াই হাজার বছরেরও বেশি।
মোগল সুবাদার ইসলাম খান ১৬১০ সালে ঢাকার পত্তন করেন বলে ইতিহাসের প্রচলিত বিশ্বাস।
ঐতিহাসিকদের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন, তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন।
সুলতানি আমলেই ঢাকায় তিনটি দুর্গ ছিল।
রাজধানী হিসেবে ঢাকার বয়স ৪০০ বছর বলে অনেকেরই ধারণা রয়েছে।
ঢাকা কবে স্বাধীন হয়?
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৫০-১৯৬০ সালের মধ্যে এই শহর বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে ঢাকা “স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী” ঘোষিত হয়।
ঢাকার প্রাচীন নাম কি ছিল?/ ঢাকার আদি নাম কি ছিল?
জাহাঙ্গীরনগর ঢাকা শহরের প্রাচীন নাম।
ঢাকা জেলার আয়তন কত / ঢাকার আয়তন ও জনসংখ্যা,
ঢাকা জেলার মোট আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ কিঃ মিঃ।
ঢাকা জেলার উত্তরে গাজীপুর জেলা ও টাঙ্গাইল জেলা, দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ জেলা ও ফরিদপুর জেলা, পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও পশ্চিমে মানিকগঞ্জ জেলা ও রাজবাড়ী জেলা।
২০১২ সালের আদমশুমারি সংশোধিত পরিসংখ্যান অনুসারে জেলার জনসংখ্যা ১৮,৩০৫,৬৭১ জনে পৌঁছেছে। ২০১২ সালের আদমশুমারি অনুসারে প্রায় ৯,৮৫২,৮৩৫ জন পুরুষ এই শহরে বাস করে, যার লিঙ্গ অনুপাত ১১৯।
বর্তমানে ঢাকা জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২২ মিলিয়নেরও বেশি। এটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল জেলা হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই জেলাটি বাঙালি, বিহারী, চাকমা, গারো এবং সাঁওতাল সহ বিচিত্র পরিসরের মানুষের বাসস্থান।
ঢাকা কি বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর?
বাংলাদেশের আর কোনো শহর ঢাকার মতো বড় নয় । বাংলাদেশের খুব কম শহরই ঢাকার মতো বড়।
ঢাকার প্রশাসনিক এলাকা ,
ঢাকা জেলা ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত:
ঢাকার রাস্তা
দোহার উপজেলা
নবাবগঞ্জ উপজেলা
কেরানীগঞ্জ উপজেলা
সাভার উপজেলা
ধামরাই উপজেলা
এছাড়া ঢাকা জেলায় ২টি সিটি কর্পোরেশন আছে সেগুলো হল :
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
ঢাকার ধর্ম কি?
2022 সালের জাতীয় সরকারি আদমশুমারি অনুসারে, সুন্নি মুসলমানরা জনসংখ্যার প্রায় 91 শতাংশ এবং হিন্দুরা প্রায় 8 শতাংশ।
ঢাকা জেলার থানা সমূহ,
ঢাকা জেলার মোট ৫ টি থানা/উপজেলা সমূহ হলো:
সাভার,
কেরাণীগঞ্জ,
নবাবগঞ্জ,
ধামরাই,
দোহার।
ঢাকা জেলা ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার, সাভার এবং ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত।
ঢাকায় মোট কয়টি থানা ও কি কি?
ঢাকায় মোট ৪৬ টি থানা আছে। এগুলো হলো – চকবাজার, লালবাগ, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, হাজারীবাগ, রমনা, মতিঝিল, পল্টন, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর, পল্লবী, শাহ আলী, তুরাগ,খিলক্ষেত, সবুজবাগ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ডেমরা, শ্যামপুর, বাড্ডা, কাফরুল, কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও ও উত্তরা।
ঢাকা নামকরণ,
ঢাকা জেলার সৌন্দর্য
ঢাকা জেলার নামটি এখনও ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্কের বিষয়। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে নামটি এসেছে ঢাক গাছ থেকে আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এটি এসেছে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে।
ঢাকা প্রথম রাজধানী হয় কবে?
মোঘল আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত মোট পাঁচ বার ঢাকাকে রাজধানী করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালে ঢাকা “স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী” ঘোষিত হয়।
ঢাকাকে মসজিদের শহর বলা হয় কেন?
ঢাকা বাংলাদেশের বাণিজ্য ও সংস্কৃতির একটি কেন্দ্র, যার একটি বাঙালি রাজধানী হিসেবে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ইসলামিক স্থাপত্য এবং বুড়িগঙ্গা (পুরাতন গঙ্গা) এর মুখোমুখি নদীর তীরের কারণে এটিকে মসজিদের শহর এবং প্রাচ্যের ভেনিস বলা হয়।
ঢাকায় কোন নদী প্রবাহিত হয়েছে?
১৭ শতকের গোড়ার দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, টঙ্গীখাল এবং শীতলক্ষ্যা নদী দ্বারা গঠিত একটি পেরিফেরাল নদী দ্বারা বেষ্টিত।
ঢাকায় থাকতে কেমন লাগে?
ঢাকা শহরটি দেশের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রাণবন্ত বাজার, ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক এবং রঙিন উৎসব রয়েছে। এইসবকিছু স্থানীয় ঐতিহ্যের সাথে গভীর সংযোগ প্রদান করে। তাছাড়াও দিয়েছে বৈচিত্র্যময় এবং সাশ্রয়ী রন্ধনপ্রণালী। ঢাকা তার সুস্বাদু এবং সস্তা স্থানীয় খাবারের ব্যাপক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত, যা এটিকে খাদ্য প্রেমীদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল করে তুলেছে।